যুক্তরাষ্ট্রের সেই ২৯ মিলিয়ন ডলার আসলে কার হাতে গেছে?

মার্কিন তহবিলে বাংলাদেশের রাজনীতির জমিন শক্তিশালী করার যে প্রকল্প নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বিতর্ক উসকে দিয়েছেন, সেটি বাস্তবায়ন করেছে তার দেশেরই একটি এনজিও- ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল।

‘স্ট্রেংদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ ইন বাংলাদেশ’ (এসপিএল) শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৭ সাল থেকে বাস্তবায়ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি। ২৯ মিলিয়ন (২ কোটি ৯০ লাখ) ডলারের এ প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

কেউ নাম শোনেনি– এমন এক প্রতিষ্ঠান, যেটা চালায় মাত্র দুজন, সেই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শক্তিশালী করার প্রকল্প বাস্তবায়নে ২ কোটি ৯০ লাখ ডলার পেয়ে ‘ধনী বনে গেছে’ বলে ট্রাম্প মন্তব্য করেন, আর তারপর শোরগোল শুরু হয় বাংলাদেশে।

এ নিয়ে নানা আলোচনা, জল্পনা-কল্পনার মধ্যে প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আইনুল ইসলামের একটি এনজিওকে জড়িয়েও নানা কথাবার্তা শুরু হয় সোশাল মিডিয়ায়।

বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা খরচের দায়িত্ব আসলে কারা পেয়েছে; ওই প্রকল্পে আসলে কী কাজ হয়েছে, তার ফলাফলই বা কী- সেসব আলোচনাও শুরু হয়।

এ প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিকে প্রভাবিত করা হয়েছে কি না, সে প্রশ্ন তোলেন কেউ কেউ। বড় অংকের এ অর্থের আসল সুবিধাভোগী কারা, দেশের গণতন্ত্র বা রাজনীতি সত্যিকার অর্থে শক্তিশালী হয়েছে কি না তাও স্থান পায় আলোচনায়।

যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন অ্যাসিসট্যান্স ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ইউএসএআইডির অর্থায়নের ২৯ মিলিয়ন ডলারের এসপিএল প্রকল্প ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় ২০১৭ সালের ২ মার্চ; মেয়াদ শেষ হয় ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর।

প্রকল্পের মোট প্রতিশ্রুত অর্থের পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৯০ লাখ ৬ হাজার ৮৫৫ ডলার। তার মধ্যে ২ কোটি ৮০ লাখ ১৭ ডলার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ছাড় হয়।

আট বছর মেয়াদের এ প্রকল্পে ২০২৪ সালে ছাড়ের পরিমাণ ছিল ৩৬ লাখ ৩৯ হাজার ১২৭ ডলার। এর আগে ২০২৩ সালে ৩৭ লাখ ৪ হাজার ৫৮৬ ডলার; ২০২২ সালে ৩২ লাখ ৩৮ হাজার ২২ ডলার; ২০২১ সালে ২৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৮৪ ডলার; ২০২০ সালে ৩৩ লাখ ৭৩ হাজার ৬৮১ ডলার; ২০১৯ সালে ৬৭ লাখ ৩৭ হাজার ৩০ ডলার; ২০১৮ সালে ৩৫ লাখ ৬৩ হাজার ৮৪৭ ডলার এবং ২০১৭ সালে ৭ লাখ ৯২ হাজার ৯৪০ ডলার ছাড় হয়।

ট্রাম্পের বক্তব্য এবং এসপিএল প্রকল্পের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালকে ইমেইল করেছিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। লিখিত প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশে তাদের একটি প্রকল্পের চিফ অব পার্টি ক্যাথেরিন সেসিল বলেন, তার কোনো ‘মন্তব্য নেই’।

প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত বর্ণনায় ফরেন অ্যাসিসট্যান্স ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, বিরোধ মেটানো এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে যৌক্তিক সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক কর্মী ও নাগরিকদের দক্ষতা ও শিক্ষা দেওয়া এ কার্যক্রমের উদ্দেশ্য।

“ভবিষ্যতের জন্য পুরুষ ও নারী নেতাদের শক্তিশালী দল গঠন করা হবে। নীতিগত বিতর্ক ও সংস্কারে কার্যকর অবদান রাখা; রাজনৈতিক ভিন্নতার মধ্যেও সহিষ্ণুতা ও গঠনমূলক আলোচনায় সম্পৃক্ততা এবং রাজনৈতিক সহিংসতা মোকাবেলায় তাদের দক্ষতা বাড়ানো হবে।”

Post a Comment

0 Comments